।।বিকে রিপোর্ট।।
আজ পহেলা ফাল্গুন।
ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজি বসন্ত। শীতের রুক্ষতাকে বিদায় করে আজ প্রকৃতিতে বইছে ফাল্গুনী হাওয়া। শিমুল, পলাশ, বন আজ আগুন রঙে রঙিন।
শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেম ঋতু হিসেবে পরিচিত বসন্তের প্রথম দিনে একইসঙ্গে পালিত হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। একদিকে বাসন্তী রং অন্যদিকে ভালোবাসার রংয়ে আজ মিলেমিশে একাকার মানুষ ও প্রকৃতি।
প্রকৃতি যেন আজ দখিনা হাওয়ায় রবীন্দ্রনাথের গানের মতোই হৃদয় নাচায়, ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয় হৃদয়ে-হৃদয়ে- ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,/ এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়,/ সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল-/ কার অনাদরে আজি ঝরে যায়।
বসন্ত এলে প্রকৃতিতে নব-প্রাণে সঞ্চার হয়। বসন্তের আগমনে আড়মোড়া ভেঙে প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব। বসন্তের আগমনধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে গাছের নতুন কুঁড়িতে। ফুলে ফুলে ভরে উঠে স্বাগত জানাচ্ছে- আজ বসন্ত।
তবে এই ঋতু ফাল্গুন ও চৈত্রের ভেতর লুকিয়ে থাকলেও অনুভবের জায়গা থেকে বলতে গেলে শুধু ফাল্গুন মাসের কথাই বলতে হবে। বাংলা বছর গণনায় ফাল্গুন ১১তম মাস হলেও কালের আবর্তন ও ঘটনাপ্রবাহে এটি শুধু একটি মাসের নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, পরিণত হয়েছে বাঙালির সর্বজনীন প্রাণের উৎসবে। এ উৎসব বাংলার যেমন গৌরবময় ঐতিহ্য, তেমনি বাঙালিসত্তা।
শুরুটা করেছিলেন মোগল সম্রাট আকবর। ১৫৮৫ বঙ্গাব্দে তিনি বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরকেন্দ্রিক চৌদ্দটি উৎসবেরও প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে ‘বসন্ত উৎসব’ একটি। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরন এখনকার মতো ছিল না। ব্যাপকভাবে ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয় ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে। এ উৎসব এখন আমাদের জাতীয় উৎসবও।
বসন্ত জাগরণের ধ্বনিও। কখনও ধারণ করে রুদ্রমূর্তি; দ্রোহের প্রতিমূর্তি হিসেবে বর্ণনা পাই জহির রায়হানের কালজয়ী উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’-এ। বসন্ত তাই বাঙালিজীবনেরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনোভাবেই তাকে এড়ানো যায় না।
উল্লেখ্য, ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে সারাবিশ্বে পরিচিত। বাংলাদেশেও দিবসটি ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। অন্যদিকে, বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাস।
কয়েক বছর ধরে একই দিনে উদযাপিত হয়ে আসছে পয়লা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার করায় এখন একই দিনেই পড়েছে দুটি উৎসব।
রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন আয়োজন ও আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরি করে কাটাবে ভালোবাসার মানুষগুলো। তাদের পরনে লাল, নীল, সাদা, বেগুনি, গোলাপি বিভিন্ন রঙের পোশাক আর সাজসজ্জায় ভালোবাসার দিনটি যেন বর্ণিল রঙে রঙিন হয়ে উঠবে। এই দিনে মোড়ে মোড়ে অস্থায়ী ফুলের দোকানে দিনভর বিক্রি হয় গোলাপ, গাঁদাসহ নানা ধরনের রঙিন ফুল।
তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন রঙে রাঙিয়ে তোলে রাজধানীর রাজপথ, বইমেলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুশোভিত সবুজ চত্বর, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ পুরো নগরী। বোটানিক্যাল গার্ডেন, রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডি লেক, বনানী লেক, মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, চারুকলার পেছনের সবুজ প্রাঙ্গণ ফুলে ফুলে বর্ণিল, উচ্ছল-উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ভালোবাসা ও ফাল্গুন উদযাপনে।