বিপিএলের এবারের আসরের ফাইনালে ক্রিকেটের সৌন্দর্য এর উত্তেজনাকে ক্রিকেটপ্রেমিরা প্রাণভরে উপভোগ করলেন ঢাকার শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। চিটাগাং কিংসের ব্যাটিংয়ের মেজাজ দেখে অনেক হয়তো ধরেই নিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন তারাই। ফাইনাল ম্যাচের রঙ পাল্টেছে বারবার।
শুক্রবার ৭ ফেব্রুয়ারী ফাইনালে মুখোমুখি হয় দুই তারকা দল চিটাগাং কিংস ও ফরচুন বরিশাল। শুরুতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তিন উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান সংগ্রহ করে চিটাগং কিংস। জবাবে ১৯.৩ ওভারে সাত উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বরিশাল।
শ্বাসরূদ্ধকর ফাইনালে ফরচুন বরিশালের লক্ষ্য ছিল ১৯৫ রান। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল আট রান। বোলার হোসাইন তালাত। উইকেটে ছিলেন রিশাদ হোসেন আর এবাদত হোসেন। প্রথম বলেই লং অনের ওপর দিয়ে সোজা ছক্কা মেরে দিলেন রিশাদ হোসেন।
পরের বলে একটি সিঙ্গেল এবং একটি ওয়াইড। তিন বল বাকি থাকতেই তিন উইকেটের ব্যবধানে জয় তুলে নিলো ফরচুন বরিশাল। টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হলো তামিম ইকবালের দল। বিপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৯৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় জিতেছে দলটি।
এর আগে বিপিএলে সর্বোচ্চ ১৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড ছিল। ২০২৩ আসরের ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারানোর পথে সেই কীর্তি গড়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ২০২৫ একাদশ বিপিএলের ফাইনাল সেটিকেও ছাড়িয়ে গেছে।
লক্ষ্য তাড়ায় অধিনায়ক তামিম ঝোড়ো শুরু এনে দেন বরিশালকে। এরপর শরিফুল দুই দফায় ব্রেকথ্রু দিলেও চূড়ান্ত সাফল্য পাননি। নাটকীয় লড়াই শেষে বরিশালের লঞ্চ গন্তব্যে নোঙর ফেলে ১৯.৩ ওভারে।
ফাইনাল ম্যাচের রঙ পাল্টেছে বারবার। যার শেষটায় নায়ক বনে গেছেন রিশাদ হোসেন। তার দুই ছক্কায় শেষ দুই ওভারে স্নায়ুর কঠিন পরীক্ষায় উৎরে যেতে সক্ষম হয়েছে বরিশাল। ৬ বলে ১৮ রানের ক্যামিও ইনিংসে চ্যাম্পিয়ন তকমা পেলেন রিশাদও। এর আগে তামিমের ২৯ বলে ৫৪, কাইল মায়ার্সের ২৮ বলে ৪৬ রানই মূলত বরিশালকে সঠিক লক্ষপথে রাখে। এ ছাড়া ২৮ বলে ৩২ রানের ধীরগতির ইনিংস খেলেছেন তাওহীদ হৃদয়।
চিটাগাং কিংসের দেওয়া ১৯৬ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা যেমন দরকার ছিল তেমনই পেয়েছে ফরচুন বরিশাল। অধিনায়ক তামিম ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাত্র ২৪ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছেন বরিশাল অধিনায়ক। তার ঝড় দেখে মনে হচ্ছিল বুঝি একপেশে একটি ফাইনাল জিততে চলেছে বরিশাল। তবে ইনিংসের নবম ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলেন শরিফুল ইসলাম। এরপর নাঈম ইসলামের বলে হৃদয় ও মুশফিকুর রহিমের (৯ বলে ১৬) বিদায়ে শঙ্কায় পড়ে যায় বরিশাল।
তবে নাটকীয়তা তখনও শেষ হয়নি, একদিকে চিটাগাংয়ের ফিল্ডাররা এলেমেলো ফিল্ডিং করছেন, অন্যদিকে ঝড় তুলছিলেন কাইল মায়ার্স। শরিফুলের বলে আউট হওয়ার আগে এই ক্যারিবীয় তারকা ২৮ বলে ৩টি করে চার-ছক্কায় ৪৬ রান করেছেন। যদিও একই ওভারে মায়ার্স ও মাহমুদউল্লাহকে (৭) ফিরিয়ে চিটাগাংকে আশা দেখান শরিফুল। তবে একের পর এক ফিল্ডিং মিসের খেসারত তো দিতেই হবে। ফলে দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠে শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে চিটাগাংয়ের।
রানার্স-আপ বন্দরনগরীর দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল। এ ছাড়া নাঈম ২ এবং বিনুরা ফার্নান্দো একটি উইকেট শিকার করেছেন।