জিম্মিদের ফেরত পেয়েও ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেননি নেতানিয়াহু

  • আপলোড টাইম : ১১:১৯ এএম, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
গাজায় আটক ছয় ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এর বিনিময়ে ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়ার কথা থাকলেও তা অমান্য করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সিনিয়র সদস্য বাসেম নাইম বলেন, আমরা মনে করি, এটি ডানপন্থি সরকারের একটি কৌশল, যা চুক্তি বানচাল ও যুদ্ধের দিকে ফেরার বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।

তিনি জানান, হামাস এখনো চুক্তিতে অটল রয়েছে এবং তাদের সব শর্ত মেনে চলেছে। তবে তিনি অভিযোগ করেন, ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে।

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি বানচাল করতে নেতানিয়াহু ‘নোংরা খেলা’ খেলছেন বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। দলটির দাবি, ইসরায়েল সরকার চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায়ের বিষয়ে কোনো আলোচনা করছে না, যা ১ মার্চ শেষ হওয়ার কথা।

নাইম বলেন, প্রথম পর্যায়ে ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, নির্ধারিত মানবিক সহায়তার অধিকাংশ গাজায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, এবং নেতজারিম করিডোর (গাজার উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে সংযোগকারী সংকীর্ণ পথ) থেকে সেনা প্রত্যাহার বিলম্বিত করা হয়েছে।

এদিকে এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের ‘অপমানজনক অনুষ্ঠানের’ মাধ্যমে ইসরায়েলের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তাই আপাতত ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেয়া হবে না। খবর রয়টার্স

তিনি বলেন, অপমানজনক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জিম্মিদের অসম্মান করা হয়েছে। এছাড়া অপপ্রচারের জন্য জিম্মিদের নিন্দনীয়ভাবে ব্যবহার করার জেরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপে অপমানজনক অনুষ্ঠান ছাড়া জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত শনিবার যেসব ফিলিস্তিনি মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাদের ছাড়া হবে না।

দীর্ঘ প্রায় ১৬ মাস রক্তাক্ত সংঘাতের পর গত ১৯ জানুয়ারি থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। এরপর থেকে যুদ্ধবিরতির চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। তাদের মুক্তির সময় বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

এর আগে বৃহস্পতিবার চার ইসরায়েলি জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করে হামাস। তবে ওই দিন শিরি বিবাসের মরদেহের পরিবর্তে আরেক জনের দেহ হস্তান্তর করা হয়েছিল। এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইসরায়েল। অবশ্য পরদিন শিরি বিবাসের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

চলমান যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ ৪২ দিনের। এই সময়ে মোট ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ১ হাজার ৯০০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। তারপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ শুরুর কথা রয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতিতে যেতে আগ্রহী নন নেতানিয়াহু।

এই চুক্তির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায় ছয় সপ্তাহের প্রথম পর্যায়ের মধ্যে চূড়ান্ত করার কথা ছিল।

প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়া, গাজা থেকে আংশিকভাবে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ নিশ্চিত করা হয়।

১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া এই চুক্তি অনুযায়ী দ্বিতীয় পর্যায় চূড়ান্ত হলে সব ইসরায়েলি বন্দির মুক্তি এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা। 

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল ৬০ হাজার ভ্রাম্যমাণ ঘর এবং ২ লাখ তাঁবু গাজায় প্রবেশের অনুমতি দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। গাজার ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অঞ্চলটির বিশাল অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী শনিবার আরও ছয় জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর বিনিময়ে ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও- তা অমান্য করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

রবিবার ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা শত শত ফিলিস্তিন বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা পিছিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না হামাস তাদের শর্ত পূরণ করে। এই সিদ্ধান্ত গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির ভঙ্গুরতা প্রকাশ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অফিস রবিবার ভোরে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল ৬২০ জন ফিলিস্তিন বন্দী ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে, যতক্ষণ না পরবর্তী দফায় জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হচ্ছে এবং অপমানজনক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া তাদের হস্তান্তর করা হয়।

গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৪৮ হাজার ৩১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা ১৩ হাজার জনেরও বেশি মানুষকেও মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামাসের ওই দিনের হামলায় অন্তত ১১৩৯ জন নিহত হন এবং প্রায় ২৪০ জনকে বন্দী করা হয়।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech