বাংলাদেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একমাত্র রোগী সানজিদা আক্তার (৩০) মারা গেছেন। রাজধানীর মহাখালী সংক্রামকব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ১৬ জানুয়ারি সকালে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংক্রামকব্যাধি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরিফুল বাশার।
তিনি বলেন, ওই নারী গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় মারা গেছেন। দেশে এইচএমপিভি শনাক্ত হওয়া কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর তথ্য এটিই প্রথম। তবে তিনি যে এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্যই মারা গেছেন, এমনটি বলা যাবে না। ওনার অন্য আরও শারীরিক জটিলতা ছিল, যার জন্য হঠাৎ করেই শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।
আক্রান্ত ওই নারীর বাড়ি নরসিংদী। ৯ জানুয়ারি তাঁর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওই নারী এইচএমপিভির পাশাপাশি ব্যাকটেরিয়াজনিত অন্য একটি সংক্রমণেও আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর পরিস্থিতি কিছুটা জটিল ছিল।ওই নারী কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা হলেও থাকতেন নরসিংদীতে। সেখানেই ভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি।
তার আর কী কী জটিলতা ছিল জানতে চাইলে হাসপাতাল তত্বাবধায়ক বলেন, তিনি ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া তার কিডনি সমস্যা ছিল, সেইসাথে তিনি অনেক মোটা ছিলেন, যে কারণে তাকে ভেন্টিলেটরে ওঠানো যাচ্ছিল না। ভাইরাল নিউমোনিয়ার জন্যও সম্ভবত মারা যাননি, অনেকটা সুস্থও হয়ে গেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী জটিলতার জন্য হয়তো সমস্যা হয়েছে।
ডেথ রিভিউ করবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বজনরা ইতোমধ্যে লাশ নিয়ে গেছেন। তারপরও এটা নিয়ে অধিদপ্তর অথবা মন্ত্রণালয় ব্রিফ করবে। সেই আলোকে আমরা পরবর্তী পরিকল্পনা করবো।
গত ১২ জানুয়ারি এই নারীর এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। জানা যাচ্ছিল ওই নারীর বিদেশ সফরের কোনো ইতিহাস ছিল না। তখন জানা যায় ওই নারীর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায়।
১২ জানুয়ারি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই নারী এইচএমপিভিতে আক্রান্তের পাশাপাশি ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত ছিলেন।
চলতি বছরের শুরুতে চীনে প্রথম এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস।
ভাইরাসটিকে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভি নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। এইচএমপিভি আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি, কাশি হয়, নাক বন্ধ হয়ে যায়, শরীরে ব্যথা হয়। এটি অন্য জ্বরের মতো। তবে শিশু, বয়স্ক এবং বয়স্ক যেসব ব্যক্তি ক্যানসার বা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি আছে। এই ঝুঁকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার।
শীতের মৌসুমে ভাইরাসটি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে এর দ্রুত বিস্তার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।