দেশে জিকা ভাইরাসের ‘ক্লাস্টার’ শনাক্ত : আক্রান্ত ৫ – গবেষকদের উদ্বেগ

  • আপলোড টাইম : ১১:৫৭ এএম, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০২৫
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে রিপোর্ট।।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের ক্লাস্টার শনাক্ত করেছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)।

দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের এক দশক পর এবার ভাইরাসটির ক্লাস্টার (গুচ্ছ) সংক্রমণ, অর্থাৎ এক স্থানে একাধিক ব্যক্তির শরীরে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। একই এলাকার পাঁচ ব্যক্তির সংক্রমণের বিষয়টি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।

সোমবার ৩ মার্চ আইসিডিডিআরবি তাদের ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে ১৫২ জন রোগীর নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। জ্বরের পাশাপাশি তাদের ভাইরাসের অন্যান্য লক্ষণ ছিল। তাদের মধ্যে পাঁচজন পুরুষের মধ্যে জিকার সংক্রমণ ধরা পড়ে, যারা সবাই ঢাকার মহাখালী এলাকার বাসিন্দা।

পাঁচজন রোগী শনাক্ত হওয়াকে ‘ক্লাস্টার’ বলার ব্যাখ্যায় গবেষণা দলের প্রধান শফিউল আলম সোমবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, আক্রান্ত এই পাঁচজন ঢাকার মহাখালী এলাকার বাসিন্দা। তারা সবাই এক কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্যে বসবাস করেন। শনাক্ত হওয়ার আগে দুই বছরের মধ্যে তাদের বিদেশ ভ্রমণের ইতিহাস নেই। এজন্যই এটাকে ক্লাস্টার বলা হচ্ছে। মানে হচ্ছে তারা স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন।

আইসিডিডিআর,বির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সংগ্রহ করা নমুনা পর্যালোচনা করে এ তথ্য পেয়েছেন তারা। বিজ্ঞানীরা সমগ্র জিনোম সিকোয়েন্সিং এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ ব্যবহার করে প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশি এই স্ট্রেইন এশিয়ান লাইনেজের অন্তর্গত। এতে আক্রান্ত হলে মাইক্রোসেফালি ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগের মতো গুরুতর সংকট দেখা দিতে পারে।

দেশে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত আরও রোগী পাওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছেন শফিউল আলম। তিনি বলেন, আমাদের দেশের রোগীদের লক্ষণ-উপসর্গ ডেঙ্গু আক্রান্তদের মত। এ কারণে কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। কিন্তু এটা বাড়তে পারে। এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে জিবিএস (Guillain-Barré syndrome) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। আমাদের এখানে এখনও গর্ভবতী নারী সংক্রমিত হওয়ার তথ্য মেলেনি। কিন্তু হলে ব্রাজিলে যেমন হয়েছিল, মাইক্রোসেফালি, বাচ্চাদের ব্রেইন মাথা ছোট হয়, ব্রেইন ঠিকমতো ডেভেলপ হয় না, সেরকম হতে পারে।

শফিউল আলম বলেন, তারা একটা নির্দিষ্ট এলাকায় কয়েকজন রোগী পেয়েছেন। এটা স্থানীয় সংক্রমণ ইঙ্গিত করে।

জিকা ভাইরাস এডিস মশাবাহিত রোগ। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মত জিকাও ছড়ায় দুই ধরনের এইডিস মশার মাধ্যমে।

জিকার লক্ষণ

১. প্রতি পাঁচজন রোগীর মধ্যে একজনের মধ্যে হালকা জ্বর, চোখে লাল হওয়া বা কালশিটে দাগ পড়া, মাথা ব্যথা, হাড়ের গিঁটে ব্যথা ও চর্মরোগের লক্ষণ দেখা যায়।

২. বিরল ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি গিলিয়ান-ব্যারি সিনড্রোমেও ভুগতে পারেন; এর ফলে সাময়িক পক্ষাঘাত কিংবা ‘নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারের’ মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

৩. এ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম ও বেশি করে তরল খাবার খেতে পরামর্শ দেয়া হয়।

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ১১ জন রোগী পাওয়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর।

উল্লেখ্য, ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হলেও পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এশিয়া ও আফ্রিকায় নীরবে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০৭ সালে ফেডারেটেড স্টেটস অব মাইক্রোনেশিয়ার ইয়াপ দ্বীপে প্রথম বড় জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া যায়। ২০১৫ সালে, ব্রাজিলে একটি বড় প্রাদুর্ভাব ঘটেছিল এবং পরবর্তীকালে দক্ষিণ আমেরিকার বাকি অংশ, ক্যারিবিয়ান এবং অবশেষে বিশ্বের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।

২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন এবং ভারতে জিকা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রেট্রোস্পেকটিভ সার্ভিল্যান্স স্টাডিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো একজন জিকা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। ২০১৪ সালে বিদেশ ভ্রমণের পূর্ব ইতিহাস নেই এমন এক রোগীর কাছ থেকে এই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে, ব্রাজিলে ২০১৫ সালের প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech