ভালোবাসা আর বাসন্তি সাজে রঙিন বইমেলা

  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৭ পিএম, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

।। মো: আকরাম হোসেন।।
আজ পয়লা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন।

আবার আজই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এমন দিনে বইমেলায় আজ সাজ সাজ রব। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন বইমেলায়। নারীরা অনেকেই এসেছেন বাসন্তী রঙসহ নানান রঙের শাড়ি পরে। পুরুষেরা পরেছেন বাহারি পাঞ্জাবি। কিনছেন পছন্দের সব বই।

মানিকগঞ্জ থেকে প্রথমবারের মতো বইমেলায় এসেছেন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা আলফাজ আলী। বিভিন্ন স্টলে বই দেখছিলেন তিনি। তার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বইমেলায় এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই ভালো লাগছে। প্রথমবারের মতো বইমেলায় আসা। এমন পরিবেশে এসে যে কারও ভালো লাগার কথা।

কী কী বই কিনলেন বা কিনবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লেখক রূপক বিধৌত সাধুর গল্পগ্রন্থ ‘কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়’ কিনলাম। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের বই কিনব। শিশুতোষ বইও কেনার ইচ্ছে আছে।

রাজধানীর বনানী থেকে এসেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বইমেলা তো বাঙালির প্রাণের মেলা। একটা উৎসব উৎসব অনুভূতি আসে বইমেলায় এলে।

কোন ধরনের বই বেশি পছন্দ- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি মূলত ইতিহাস আশ্রয়ী বই পছন্দ করি। ময়মনসিংহের ইতিহাস বিষয়ক বই খুঁজছি। এছাড়া সিগমুন্ড ফ্রয়েডের অনুবাদ সাহিত্য কিনব।

মেলায় আগত অধিকাংশ দর্শনার্থীকে দেখা গেছে যুগলবন্দী অবস্থায়। বেশিরভাগই উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী। প্রায় সকলের গায়েই জড়ানো ছিল বসন্ত নির্দেশক নানা রঙের পঞ্জাবি ও শাড়ি। নারীদের মাথায় শোভা পেয়েছে বাহারি ফুলের রিং। হিজাবী নারীদের অনেকেই কালো বোরকার সঙ্গে মাথায় এই ফুলের রিং গুঁজে পছন্দের বই কিংবা প্রকাশনীর স্টলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে।

তবে একসঙ্গে এত উপলক্ষ মেলার ওপর সৃষ্টি করেছে বাড়তি চাপ। মেলা সকাল ১১টা থেকে শুরু হলেও বিকাল থেকেই চাপ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে হাঁটার মতো জায়গা পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের জন্য কতটুকু উপভোগ্য হতে পেরেছে মেলা তা বলা কঠিন।

তবে বই বিক্রি হয়েছে বেশ ভালোই, মেলায় ছুটির দিনে স্বভাবতই বিক্রি বেশি থাকে, তার সাথে যুক্ত হয়েছে ভালোবাসা দিবস ও বসন্তের আমেজ। ফলে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নে।

কথা হয় বেসরকারি ব্যাংক আইএফআইসির কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদের সাথে। বইমেলায় এসেছেন কেমন অনুভব করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে বইমেলায় আসা হয়নি কখনও। আজই প্রথম এলাম। অনেক ভালো লাগছে। 

বাংলার প্রকাশন (৮২০-২১ নং স্টল)-এর বিক্রয়কর্মী আদনান আহম্মেদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কোন ধরনের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, থ্রিলার বেশি চলছে। এছাড়া কম বয়সী ছেলেমেয়েরা ভৌতিক গল্প কিনছে।

চাকুরীজীবী দম্পতি সোনিয়া আহসান ও রাশেদুল হক। আজ তাদের ছুটির দিন, তাই বিকেলবেলা বইমেলায় এসেছেন ঘুরতে।

রাশেদের গায়ে হলুদ পাঞ্জাবি ও সাদা পায়জামা। সোনিয়া পরেছেন হলুদ শাড়ি, মাথায় ফুল। পহেলা ফাগুন ও ভালোবাসা দিবসে এমনভাবে সেজেছেন তারা। 

কথা হয় লেখক খাইরুল বাশার আশিকের সঙ্গে। ‘নিপাতের দিনলিপি’ নামে তার একটি বই বেরিয়েছে এবার। তিনি বলেন, ‘নিপাতের দিনলিপি’ মূলত জুলাই আন্দোলন নিয়ে লেখা। যারা এই আন্দোলনটাকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চান, তারা আমার বইটি পড়ে দেখতে পারেন।

এদিকে ছুটির দিন হওয়ায় সকাল থেকেই জমে উঠেছে শিশু চত্বর। বসন্ত আর ভালোবাসার দোলা লেগেছে শিশুদের মাঝেও। অভিভাবকদের সঙ্গে হলুদ ও লাল পোশাকে তারাও এসেছে মেলা ঘুরতে। এদিন সকালে পাপেট থিয়েটর শিশুদের জন্য পাপেট শোয়ের আয়োজন করে।

মোহাম্মদপুর থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারহান। তিনি বলেন, ‘মেলায় আসতে ভালো লাগে। আজ পহেলা ফাল্গুন তাই হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়েছি। ঘুরে ঘুরে বই দেখছি এখনও কোনও বই পছন্দ হয়নি।’

প্রসঙ্গত, আজ শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টার পরিবর্তে বেলা ১১টায় খুলেছে বইমেলার গেট। আর পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষ্যে বইমেলার কার্যক্রম রাত ৯টার পরিবর্তে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শেষ হবে।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech