।।বিকে আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
ভারতের মহাকুম্ভমেলায় যাওয়ার পথে নয়া দিল্লি রেলস্টেশনে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় এবং ধাক্কাধাক্কির মধ্যে পড়ে পদদলিত হয়ে অন্তত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ১৮ জনের মধ্যে ১১ জন নারী এবং পাঁচজন শিশু রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ।
গতকাল শনিবার রাতে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে। কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড়ের মধ্যে দিল্লি রেলস্টেশনের দুটি প্ল্যাটফর্মে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ট্রেনে ওঠার সময় অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে পদপিষ্ট হন অনেকে।
রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার।
সরকারি তথ্যের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় পুলিশ বলছে, মহাকুম্ভগামী ট্রেনে উঠার জন্য হুড়োহুড়ির কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মূলত ১৩ ও ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে যাবে, এমন ঘোষণার পর যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। তখন ট্রেনে ওঠার জন্য মানুষ ছোটাছুটি করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিতে স্টেশনে পড়ে যান বেশ কয়েকজন যাত্রী। পরে পদপিষ্ট হওয়ার খবর পেয়ে দিল্লি পুলিশের রেলওয়ে ইউনিট প্ল্যাটফর্মে পৌঁছায়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রেলস্টেশনে আসেন।
এ বিষয়ে রেলওয়ের ডিসিপি কেপিএস মালহোত্রা বলেন, দুটো ট্রেন আসতে দেরি হয়েছিল। তার জেরে যাত্রীদের ভিড় বেড়ে যায়। মাত্র ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই ব্যাপক ভিড় হয়ে গিয়েছিল। স্পেশাল ট্রেনের ঘোষণা হতেই সবাই ওই ট্রেনে ওঠার জন্য তাড়াহুড়ো করতে থাকেন।
রেলওয়ে সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনের ১৩ এবং ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মে কুম্ভমেলার পুণ্যার্থীদের ভিড় ছিল। ওই দুই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছিল বলেও যাত্রীদের অভিযোগ। কেউ কেউ দাবি করতে থাকেন, দু’টি ট্রেন বাতিল হয়ে গেছে। ফলে ভিড়ের মধ্যে দমবন্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। অনেকেই দাবি করেন, পদপিষ্টের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় ওই দুই প্ল্যাটফর্মে। যদিও ভারতীয় রেলের দাবি এই সবই গুজব ছিল।
ভারতীয় রেলওয়ে এই ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি, গুরুতর আহতদের জন্য আড়াই লাখ রুপি এবং সামান্য আহতদের জন্য ১ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।
এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘পদপিষ্টের ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আছে প্রশাসন।’
এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবও। উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর এক্স হ্যান্ডলে লেখেন, দিল্লি স্টেশনে পদপিষ্টের ঘটনায় মৃত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। মুখ্যসচিব ও পুলিশ কমিশনারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারতের রেল মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, রেল পুলিশ এবং দিল্লি পুলিশের দল নয়াদিল্লি স্টেশনে পৌঁছেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি মন্ত্রণালয়ের। এই ভিড়ের মধ্যে পড়ে আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।