শেষ হলো ৩ দিনের ডিসি সম্মেলন : যেসব দিকনির্দেশনা পেলেন ডিসিরা

  • আপলোড টাইম : ১২:৫৩ পিএম, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে রিপোর্ট।।
শেষ হলো তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। গত রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে শুরু হয়ে মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে সমাপনী অধিবেশন ও নৈশভোজের মাধ্যমে তা শেষ হয়।

অন্যান্যবারের মতো এবারও কার্য-অধিবেশনগুলো রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন-২০২৫’ উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা জেলা প্রশাসকদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেন।

উল্লেখ্য,সরকারের নীতি-নির্ধারক ও জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়ার জন্য প্রতিবছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সম্মেলনের প্রথম দিন সন্ধ্যা ৬টার পর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সভা করেন। এরপর সেখানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনাররা নৈশভোজ করেন।

প্রথম দিন আটটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে তিনটি কার্য-অধিবেশন হয়।

দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও দিক-নির্দেশনা গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসকরা। দ্বিতীয় দিন ২১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে আটটি অধিবেশন হয়।

মঙ্গলবার তৃতীয় ও শেষ দিনে মোট ২২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে ১৪টি কার্য-অধিবেশন হয় ডিসিদের।

এবার সম্মেলনে মোট ৩৪টি অধিবেশন হয়। এরমধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে কার্য-অধিবেশন ৩০টি।

কার্য অধিবেশনগুলোতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সিনিয়র সচিব ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন।

কার্য-অধিবেশনগুলোতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। অধিবেশনগুলো শেষে সংশ্লিষ্টরা ডিসিদের প্রস্তাবের বিষয়ে তাদের অবস্থান ও দিক-নির্দেশনা দেওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন।

এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৩৫৪টি প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছিল।

কার্য-অধিবেশনগুলোতে এসব প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো ছাড়াও ডিসিরা তাৎক্ষণিক বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এবার ডিসি সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচি বাস্তবায়ন। এছাড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়ের বিষয়গুলোকে আলোচনার জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

এবার সম্মেলনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসি এবং বিভাগীয় কমিশনারদের সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়নি। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কর্মসূচি না মেলায় সৌজন্য সাক্ষাৎ রাখা হয়নি বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

সম্মেলন শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, ডিসিদের আমরা একটা মেসেজ দিয়েছি, সামনে চ্যালেঞ্জ আছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য যাতে তারা প্রস্তুত থাকেন।

ডিসি সম্মেলন আয়োজনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি তারা (ডিসি) আরও উজ্জীবিত হবেন।

এ সম্মেলন থেকে নানা দিকনির্দেশনা পেয়েছেন ডিসিরা। যা মাঠ প্রশাসনে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে তাদেরকে।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, জেলা-উপজেলার চিকিৎসক-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায়, সড়ক দুর্ঘটনা কমানোয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, দুর্নীতি বন্ধে কঠোর অবস্থান, নির্বাচনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগসহ নানা দিকনির্দেশনা পেয়েছেন ডিসিরা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সরকারের সর্বোচ্চ বিবেচ্য বিষয়। এতে আমরা কতটুকু অগ্রসর হলাম, কী করণীয় তা নির্ধারণ করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিফল হওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে সরকার। একেক জন ডিসি একেক জেলার দায়িত্বে থাকেন। সেখানে পুলিশ প্রশাসনের কাজ কী, সিভিলে প্রশাসনের কাজ কী-তা সবই জানা। সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে হবে।

ডিসিদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, এটাই সুযোগ নিজেকে প্রকাশ করার, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার। গৎবাঁধা কাজ থাকবে, তবে সৃজনশীলতাও থাকতে হবে।

এছাড়া আরও নানা দিকনির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

পবিত্র রমজান মাসে বিশাল পরিমাণ খাদ্যশস্য অত্যন্ত সুলভ মূল্যে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। সে কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের  প্রথম অধিবেশন শেষে এ কথা বলেন খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

জেলা-উপজেলার চিকিৎসক-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায়ে কঠোর নির্দেশনা, আত্মহত্যার হার কিছু এলাকায় বেড়েছে, নতুন নির্দেশনা, সোশ্যাল রেজিস্ট্রেশনটা (ভাতাভোগীদের নিবন্ধন) আবার নতুন করে করতে একটা এমআইএসও হচ্ছে। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবার নিবন্ধন করা।

সড়ক দুর্ঘটনা কমানোয় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হবে, দুর্নীতির খবর যেন ধামাচাপা দেওয়া না হয়, না লুকানো হয় এমন আহ্বান জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন।

গুজব, মিথ্যা তথ্য ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অপতথ্যের প্রবাহ নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে উদ্যোগগুলো নিয়েছি সে বিষয়ে চলমান প্রকল্প সহায়তা করার জন্য মাঠ প্রশাসনকে বলেছি। আমাদের যে আইসিটি স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছি সে সম্পর্কে তাদের ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো ভালো করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ডিসিদের। সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি সন্তোষজনক। এটি আরো উন্নতির দিকে যাচ্ছে। কীভাবে আরো ভালো করা যায় সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আরো ভালো করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এরপর পাহাড় কাটা হলে, শ্রমিক না, মালিককে ধরা হবে। অনেক বন এখনো দখল আছে, দখলদাররা লিগ্যালি অনেক কাগজপত্র তৈরি করে। সেজন্য আমাদেরও লিগ্যালি ফাইট করতে হয়।

স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা দেশকে একটা অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, সে ব্যাপারে ডিসিদেরকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, আমি আমার সমাপনী বক্তব্যে বলেছি জেলা প্রশাসক হিসেবে আগামী দিনে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। যেমন আমি বলেছি প্রায় ১৪০০ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, যেগুলো ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে লুট হয়েছিল। আড়াই লাখ গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। সেগুলো তাদের জেলাতে কোনো না কোনো জায়গায় আছে। সেগুলো সন্ত্রাসীদের হাতে পড়তে পারে এবং তারা ব্যবহার করতে পারে। আমি উল্লেখ করেছি, স্বৈরাচার এবং তাদের দোসররা বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হচ্ছে এবং কর্মসূচি দিচ্ছে, তারা দেশকে একটা অরাজকতার দিকে নিয়ে যেতে পারে সে ব্যাপারে তাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech