চ্যালেঞ্জিং সময়ে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে

  • আপলোড টাইম : ১২:০৩ পিএম, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ছবি: সংগৃহিত

।।বিকে রিপোর্ট।।
এখনকার চ্যালেঞ্জিং সময়ে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করা হলে উৎপাদনমুখী খাতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় বাড়বে। কমবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা। নতুন বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইসঙ্গে সিমেন্ট, ইস্পাত ও সিরামিক খাতে নতুন করে আমদানি নির্ভরতা বাড়বে। ফলে আর্থিক খাতে চাপ পড়বে। আমদানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রা বেশি লাগবে। আবার গ্যাসের দাম বাড়লে অনেক শিল্প বন্ধ হবে, তখন মন্দ ঋণ বাড়বে- বলেছেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ।

রবিবার ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হোটেলে ইআরএফ ও পলিসি এক্সচেঞ্জের যৌথ আয়োজনে পলিসি কনসিডারেশন ফর এনার্জি এফরডিবিলিটি অ্যান্ড ইম্প্যাক্ট অন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পিটিটিভনেস শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মাসরুর রিয়াজ। শুভেচ্ছা ও সমাপনী বক্তব্য দেন ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা। প্রধান অতিথি ছিলেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

বক্তব্য দেন বুয়েটের ডিন প্রফেসর ইজাজ হোসেন, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইউরোচ্যামের সভাপতি নুরিয়া লোপেজ, বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলীহোসাইন, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, জ্বালানি বিষয়ক আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন প্রমুখ।

বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ অবস্থা চলতে থাকলে নতুন কারখানা এখানে আর হবে না। অনেকগুলো ব্যাংক দেউলিয়া, এনবিআরও সহযোগিতা করছে না।

এ অবস্থায় অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ালে উদ্যোক্তারা কেউ বিনিয়োগ করবে না। বিদ্যমান বিনিয়োগও সম্প্রসারণ হবে না। সার্বিকভাবে দেশে শিল্প থাকবে না।

তিনি বলেন, সরকার নতুন শিল্পের জন্য ১৫০ শতাংশ এবং সম্প্রসারণ শিল্পের জন্য ৫০ শতাংশ গ্যাস দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এমন পরিকল্পনার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ; আমরা আর কেউ শিল্প করতে চাই না। তবে বর্তমান শিল্পকে সহায়তা করবেন না, এটা হতে পারে না। সস্তা গ্যাসের কারণে দেশে শিল্প কারখানা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা দিতে পারছে না। ব্যাংকে সুদের হার বেশি; এনবিআরেও অন্য সমস্যা আছে। এ অবস্থায় অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ালে উদ্যোক্তারা কেউ নতুন বিনিয়োগ করবে। বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণও হবে না।

দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি, উৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির বেশকিছু সূচক নিম্নমুখী হওয়ায় এ ব্যবসায়ী উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, কর্মসংস্থান কমে যাওয়াটা ভয়াবহ ব্যাপার। ছাত্র-জনতার বিপ্লব হয়েছিল প্রকৃতপক্ষে বেকারত্বের কারণে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এভাবে বেকারত্ব বাড়াটা কিন্তু দুঃখজনক। বিপ্লবের স্পিরিট ধরে রাখার দায়িত্ব সবার।’

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকার ১১ টাকা ৫৮ পয়সার গ্যাস বাড়িয়ে ৩০ টাকা করে। ওই সময় শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়।

তবে দাম বাড়ানোর পর থেকেই গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা আরও খারাপ হয়। পরে যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। ২০২২ সালের আগে যে শিল্প ইউনিটে গ্যাসবিল ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ছিল, দাম বাড়ানোর পর সেটি ৫ কোটি ২৫ লাখ হয়। প্রস্তাবিত মূল্য কার্যকর হলে সেটি বেড়ে হবে ১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে কারখানা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ কম, এটি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য বিদেশি উদ্যোক্তারা মরিয়া হয়ে নাই। অনেকগুলো বিনিয়োগ গন্তব্যের একটি মাত্র এটি, খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশে জ্বালানির টেকসই ব্যবস্থাপনা ভালো নয়। একইসঙ্গে মূল্য বৃদ্ধি দেশি-বিদেশি উভয় বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ কখনোই জ্বালানি সংকটের বাইরে ছিল না। তবে বর্তমানে এটি দুর্ভিক্ষের দিকে যাচ্ছে। গত ২০১৫-১৬ বছরের দিকে দেশে ২ হাজার ৮০০ এমএফসিএফ গ্যাস উৎপাদন হলেও বর্তমানে তা এক হাজার ৯০০ এমএফসিএফে নেমে এসেছে। এতে যারা বেশি সমস্যায় পড়বে তাদের জন্য কি করা যায়, তা নিয়ে বড় পরিসরে পরিকল্পনা দরকার।

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech