।।মো: আকরাম হোসেন।।
পর্দা নেমেছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলার।
রোজাসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এবার বইমেলার সময় বৃদ্ধির কোনো চিন্তা-ভাবনা ছিল না বাংলা একাডেমির। তাই নির্ধারিত সময়েই লেখক-প্রকাশক ও পাঠকদের মিলনমেলা ভাঙল।
শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি ছুটির দিনে শেষদিনের বইমেলা শুরু হয় বেলা ১১টায় এবং শেষ হয়েছে রাত ৯টায়। মেলার শেষদিনে বই এসেছে ৩৩৫টি।
আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার উপস্থিতিতে এবারের বইমেলা প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল শুরু থেকে। শেষদিনেও মেলার সর্বত্র ছিল মানুষের ভিড়। শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন বইপ্রেমীরা।
এদিন বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় মেলার সমাপনী আয়োজন। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৫’-এর সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্ব) মো. মফিদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন- বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।
বইমেলার ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি শিমুল পারভীন ইতি, গবেষক আবদুল আলীম, গবেষক এম এ মোনায়েম এবং কবি মঈন মুনতাসীর।
এদিকে, এবারের বইমেলার সমাপনী আয়োজনে ‘কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’ এবং ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ প্রদান করা হয়। এরমধ্যে বাংলা একাডেমির ‘কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫’ পেয়েছেন কবি আল মুজাহিদী এবং ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ পেয়েছেন অধ্যাপক হান্স হার্ডার ও কথাশিল্পী বর্ণালী সাহা। পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকদের পুরস্কারের অর্থ, সম্মাননাপত্র ও সম্মাননা-স্মারক প্রদান করা হয়।
বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়। এরমধ্যে ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫’ পেয়েছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘কথাপ্রকাশ’।
২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য যৌথভাবে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫’ পেয়েছে পাঠক সমাবেশ (প্লেটো: জীবন ও দর্শন আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ঐতিহ্য (ভাষাশহিদ আবুল বরকত: নেপথ্য-কথা বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশ (গোরস্তানের পদ্য: স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন সিরাজ সালেকীন)।
এছাড়া ২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘কাকাতুয়া’ পেয়েছে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫’।
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত এবারের বইমেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ নিয়েছিল। এরমধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এবারের মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মোট এক হাজার ৮৪টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৪২টি এবং ইউনিট ছিল ৯৪৬টি।
অন্যদিকে, গতবারের মতো এবারও মেলার দুই প্রাঙ্গণে ৩৭টি প্যাভিলিয়ন ছিল। এরমধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬টি।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায় প্রায় ১৩০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর শিশুচত্বরে মোট ৭৪টি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১২০টি ইউনিটের স্টল। গত বছর প্রতিষ্ঠান ছিল ৬৮টি এবং ইউনিট ১০৯টি।
এবারের মেলায় বাংলা একাডেমির তথ্যমতে নতুন বই এসেছে ৩২৯৯টি। বাংলা একাডেমি ২৭শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৭ দিনে ৬১ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৩ টাকার বই বিক্রি করেছে।