যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ভাগ্নি, ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতির অভিযোগে নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানকে নিয়ে।
ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের হাত ধরে গড়ে ওঠা একটি দাতব্য সংস্থার বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি। এই দাতব্য সংস্থায় আড়াই লাখ পাউন্ড দান করেছিলেন তিনি।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানা গেছে। সংবাদমাধ্যম বলছে, টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতি ঘিরে বিতর্ক বৃদ্ধির মধ্যেই এবার স্পটলাইটটি যে ব্রিটিশ রাজা চার্লস তৃতীয়-এর পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য সংস্থার প্রধানের দিকে চলে গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শায়ান ব্রিটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের ‘পারিবারিক বন্ধু’। তিনি বাংলাদেশের ‘ধনকুবের’ সালমান এফ রহমানের ছেলে। টিউলিপের খালা শেখ হাসিনা লন্ডনে এলে শায়ানের ১৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়িতে ‘বিনাভাড়ায়’ থাকতেন। টিউলিপের মা শেখ রেহানা লন্ডনের গোল্ডার্স গ্রিনে যে বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকেন, সেটির মালিক শায়ান রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অফেশোর কোম্পানি।
ডেইলি মেইল বলছে, দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে ব্রিটিশ রাজা চার্লসের হাত ধরে ২০০৭ সালে গড়ে ওঠে দাতব্য সংস্থা ‘ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট’। শায়ান রহমান বর্তমানে এই তহবিলে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান।
এক সময় তিনি তাদের পারিবারিক নিয়ন্ত্রণে থাকা বেক্সিমকো গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন। ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্টের ওয়েবসাইটে এখনো তার সেই পরিচয়ই দেখানো হচ্ছে।
ডেইলি মেইল লিখেছে, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরও ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন শায়ান।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট বলেছে, আমরা শায়ান রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে অবগত। আমরা বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের দিকে নজর রাখছি।
শনিবার যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক বিক্রিত সংবাদপত্র দ্য মেইল অন সানডে (এমওএস) জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিকের “একজন পারিবারিক বন্ধু” — যিনি ব্রিটিশ রাজার প্রতিষ্ঠিত একটি দাতব্য সংস্থার চেয়ারম্যান — বাংলাদেশে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো জব্দ করা হয়েছে।
টিউলিপের পরিবারের সাথে সায়ানের সম্পর্ক কয়েক দশক ধরে আছে। এতে আরও বলা হয়েছে, টিউলিপের খালা ও আওয়ামী লীগ প্রধান হাসিনা যখনই লন্ডনে যান তখন তিনি কোনও ধরনের ভাড়া না দিয়েই সায়ানের ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ডের বাড়িতে থাকেন।
যুক্তরাজ্যের গোল্ডার্স গ্রীনের এই বাড়িতে টিউলিপের মা শেখ রেহানা কোনও ধরনের ভাড়া না দিয়েই থাকেন এবং এই বাড়িটির মালিক সায়ান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রিত একটি অফশোর কোম্পানি।
সায়ান একবার তার পরিবারের নিয়ন্ত্রিত বেক্সিমকো গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও ছিলেন। আর এটি এখনও ওই দাতব্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে। রাজা চার্লস একবার বাকিংহাম প্যালেসে একটি নৈশভোজে সায়ানের অবদানের প্রশংসাও করেছিলেন।
তিনি সেসময় বলেন, আমাদের সাথে যারা কাজ করে তাদের মতোই আমরা ভালো। তাই আমি আনন্দিত যে— বাংলাদেশে আমাদের নতুন প্রোগ্রামটি আমাদের বাংলাদেশের উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান সায়ান রহমানের তত্ত্বাবধানে এবং সমর্থনে পরিচালিত হবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, ২০১৮ সালে এই সংস্থা বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। সে বছর লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে এক নৈশভোজের অনুষ্ঠানে সবার সামনে সায়ান রহমানের প্রশংসা করেছিলেন চার্লস।
এছাড়া দ্য মেইল অন সানডে বলেছে, দুর্নীতির অভিযোগ সত্ত্বেও ট্রাস্টে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন সায়ান। এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট বলেছে: “আমরা সায়ান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে অবগত এবং বাংলাদেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখছি।”
অভিযোগের বিষয়ে শায়ানের এক মুখপাত্রের বক্তব্যও তুলে ধরেছে ডেইলি মেইল। তিনি বলেন, শায়ান রহমানের জন্ম যুক্তরাজ্যে। তিনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী। তিনি কিংবা তার স্ত্রী কখনো কোনো অপরাধে অভিযুক্ত হননি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে অন্য ৩০০ জনের সঙ্গে কেবল বাংলাদেশেই তাদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ।
সম্প্রতি সানডে টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের অর্থপাচার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সেই অনুদানের প্রসঙ্গ তোলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও। শায়ানের ‘দানশীলতা’ নিয়ে তিনি রসিকতাও করেন।
শায়ান এক সময় আইএফআইসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠনে তিনি পরিচালক পদও হারান।
সূত্র: দ্য মেইল অন সানডে, সানডে টাইমস