সিরিয়ায় ৫৩ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান: পলাতক বাশার আল-আসাদ! জীবিত না ‍মৃত?

  • আপলোড টাইম : ০৭:০৪ এএম, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৫

সিরিয়ায় ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) তড়িৎগতির আক্রমণের মুখে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীদের সশস্ত্র অভিযানের মুখে দামেস্ক ছেড়ে পালালেন বাশার আল-আসাদ।

এইচটিএস এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘রাজধানী দামেস্ক এখন আসাদ মুক্ত।’’  সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে করে রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন।

রবিবার ৮ ডিসেম্বর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।

তবে দামেস্ক ছাড়লেও তিনি কোথায় গেছেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।এর মধ্য দিয়ে আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের শাসনের পরিসমাপ্তি ঘটল।

সিরিয়ায় শাসক হিসেবে আসাদ পরিবারের আধিপত্য স্থায়ী হয়েছে টানা পাঁচ দশকেরও বেশি। পতিত স্বৈরাচার আসাদের বাবা হাফেজ আল-আসাদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে ক্ষমতা পেয়েছিলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল -আসাদ। হাফেজ আল-আসাদ ১৯৭১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিরিয়া শাসন করেছিলেন। এরপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

২০০০ সালের জুন মাসে তার মৃত্যুর পর পুত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর একই বছরের জুলাইয়ে বাশার আল-আসাদ বাথ পার্টির নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট হন। সেই সঙ্গে সামরিক বাহিনীর কমান্ডারও হন তিনি।

তবে তার শাসনের এক দশক পর, ২০১১ সালে সিরিয়ার জনগণ গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে নামলে তিনি কঠোর দমননীতি গ্রহণ করেন। আন্দোলন বাড়তে থাকলে আসাদ তার বিরোধীদের ‘সন্ত্রাসী’ বলে অভিহিত করেন এবং দমননীতি জোরদার করেন।এর ফলে দেশটি গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।এই যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিহত হন। আসাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে।

যুদ্ধ চলাকালীন সরকার-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে নির্বাচন আয়োজন করেন বাশার আল-আসাদ। তবে এই নির্বাচন অনেকের কাছে ‌‘অগণতান্ত্রিক’ বলে বিবেচিত হয়েছে। যদিও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদ কখনোই বিজয় নিশ্চিত করতে পারেননি। কিন্তু তারপরও তিনি তার সমর্থকদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু আলাওয়াইট সম্প্রদায়ের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন।

জানা যায়, বিদ্রোহীরা দামেস্কের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়ার সময় ব্যক্তিগত একটি বিমানে করে উড়াল দিয়েছেন বাশার-আল আসাদ। কিন্তু বর্তমানে তিনি কোথায় রয়েছেন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

তবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, বাশার-আল আসাদ সম্ভবত সিরিয়ার বাইরে রয়েছেন।

যদিও সিরিয়ার দুটি নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিমান দুর্ঘটনার মারা যাওয়ার উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।

কারণ দামেস্ক থেকে তাকে বহনকারী বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে অনেকটা আকস্মিকভাবে দিক পরিবর্তন করে। বিমানের এই দিক পরিবর্তন নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। বিশ্বজুড়ে বিমানের চলাচল পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার বলছে, আসাদকে বহনকারী বিমানটি সিরিয়ার মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

ফ্লাইটরাডারের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের দখল নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই একটি বিমান দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করেছে।

বিমানটি প্রাথমিকভাবে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়েছিল। ওই অঞ্চলটিতে আসাদ-সমর্থিত আলাউইত সম্প্রদায়ের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। কিন্তু সেখানকার আকাশে পৌঁছানোর পর আকস্মিক ইউ-টার্ন নেয় বিমানটি। এরপর কয়েক মিনিটের জন্য বিপরীত দিকে উড়ে যায় এবং কিছুক্ষণ পর মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায় বিমানটি।

তবে দামেস্ক থেকে উড্ডয়ন করা ওই বিমানে প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদ ছিলেন কি না তা তাক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। যদিও সিরিয়ার নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, প্রেসিডেন্ট আসাদের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরিয়ার লৌহশাসক বাশার আল-আসাদের পতনের সাথে সাথে দেশজুড়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেছেন লাখ লাখ মানুষ। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজী আল জালালি সিরিয়ায় অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে সিরীয় নাগরিকরা তাদের নেতা বেছে নেবেন।

জালালি বলেছেন, দেশের এই ক্রান্তিকাল অতিক্রমের জন্য তিনি বিদ্রোহী কমান্ডার ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির সাথে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করেছেন। যা দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গঠনের প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদের পাশাপাশি তার সন্তান ও ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রী আসমা কোথায় রয়েছেন, তা এখনও জানা যায়নি। তবে সিরিয়ার এই প্রেসিডেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, আসাদ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন কি না, তা তিনি জানেন না।

বাহরাইনের মানামা সংলাপে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনোয়ার গারগাশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসাদ আশ্রয় নিতে পারেন এমন জল্পনার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি অস্বীকৃতি জানান।

তিনি বলেন, লোকজন জানতে চাইছেন, বাশার আল-আসাদ কোথায় যাচ্ছেন? সত্যিই দিনের শেষে এটি ইতিহাসের একটি পাদটীকা। আমি এটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। যেমনটা আমি বলেছি, শেষ পর্যন্ত এটি বড় ঘটনার এক পাদটীকা।  

সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজটি শেয়ার করুন

আরও পড়ুন
© All rights reserved © 2025. Bangalir Khobor
Developed by Tiger Infotech